ববিতা | |
জন্ম | ববিতা ১৯৫৬ সাল |
---|---|
জন্মস্থান | বাগেরহাট জেলা |
পেশা | চলচ্চিত্র অভিনেত্রী |
যে কারণে পরিচিত | চলচ্চিত্র অভিনেত্রী |
চলচ্চিত্রে আগমন
ববিতার পরিবার একসময় বাগেরহাট থেকে পুরো পরিবার চলে আসে ঢাকার গেন্ডারিয়াতে। তাঁর মা ডাক্তার হওয়ায় ববিতা চেয়েছিলেন ডাক্তার হতে।জহির রায়হান প্রযোজিত ‘সংসার’ নামক ছবির মাধ্যমে তাঁর চলচ্চিত্রে আগমন ১৯৬৮ সালে।এই ছবিতে তিনি রাজ্জাক ও সুচন্দার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন।তার প্রাথমিক নাম ছিল সিনেমার জন্য সুবর্ণা। তিনি ‘কলম’ নামের একটি টিভি নাটকেও অভিনয় করেছিলেন সে সময়।১৯৬৯ সালে ‘শেষ পর্যন্ত’ সিনেমাতে অভিনয় করেন তিনি প্রথম নায়িকা চরিত্রে এবং তখন তার নাম হয় ববিতা।১৯৬৯ সালের ১৪ই আগস্টে ঐ সিনেমা মুক্তি পায় এবং ঐ দিনই তার মা মারা যান।তার কর্মজীবনের শুরুতে ভগ্নিপতি জহির রায়হানের পথ প্রদর্শনে চললেও পরে তিনি একাই পথ চলেছেন।৭০-এর দশকে শুধুমাত্র অভিনয় দিয়ে তিনি ঐ দশকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রতিষ্ঠা
গ্রামীণ,শহুরে চরিত্র কিংবা সামাজিক অ্যাকশন অথবা পোশাকী সব ধরনের ছবিতেই তিনি সাবলীলভাবে অভিনয় করেন।স্বাধীনতার পর তিনি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয় ছিলেন।তৎকালীন সময়ে তিনি ফ্যাশনের ক্ষেত্রে শহরের মেয়েদের ভীষণ প্রভাবিত করেন।নগরজীবনের আভিজাত্য তার অভিনয়ে ধরা পড়েছিল।সত্তর দশকের প্রথমার্ধে রুচিশীল, সামাজিক সিনেমা মানেই ছিল ববিতা। ‘টাকা আনা পাই’ সিনেমাটা ছিল তাঁর জন্য টার্নিং পয়েন্ট যা পরিচালনা করেছিলেন জহির রায়হান।এরপর তিনি নজরুল ইসলামের ‘স্বরলিপি’ সিনেমাতে অভিনয় করেন যা ছিল সুপারহিট সিনেমা।
অভিনয় জীবন
ববিতা প্রায় তিন দশক ধরে চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন।তবে এক পর্যায়ে সিনেমার জগতে টিকে থাকার জন্য এবং বাণিজ্যিক ছবিতে নিজের গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণের জন্য তিনি পুরোপুরি বাণিজ্যিক ঘরানার ছবির দিকে ঝুঁকে পড়েন।বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে তাই ববিতা তাই একটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম।নায়িকা হিসেবে তাঁর স্বাতন্ত্র্যতা লক্ষণীয় ছিল।অভিনয় ,গ্ল্যামার,স্কিন পার্সোনালিটি, নৃত্য কুশলতা সবকিছুতেই তিনি পারদর্শিতা দেখিয়েছিলেন।আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে ববিতা মুটিয়ে যেতে থাকেন এবং গৎ বাঁধা চলচ্চিত্রে এমন ভাবে অভিনয় করেন যে তাকে আলাদাভাবে চেনা মুশকিল হয়ে পড়ে।বর্তমানে তিনি মা-ভাবির চরিত্রে অভিনয় করে আসছেন। ববিতার একমাত্র ছেলে অনীক কানাডায় পড়াশোনা করে, তাই তিনি ২০১০ সালের মাঝামাঝিতে প্রায় ছয় মাস কানাডায় অবস্থান করেন।
অশনী সংকেত
ববিতার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছবি অশনি সংকেত।ভারতীয় ক্যামেরাম্যান নিমাই ঘোষ স্বাধীনতার পর ঢাকাতে এফডিসিতে এসে তার প্রায় ১৫০ থেক ২০০ ছবি তুলে নিয়ে যান।ওনাকে সত্যজিত রায় ছবি তুলতে পাঠিয়েছিলেন। এর কিছুদিন পর তাদের বাসায় ভারতীয় হাইকমিশন থেকে চিঠি আসে প্রাথমিক মনোনয়ণের কথা জানিয়ে।সুচন্দা এবং ববিতা তখন ভারতে যান সত্যজিৎ রায়ের সাথে দেখা করতে।সত্যজিত রায় তাকে দেখে অনেক লাজুক ভেবেছিলেন।তাই ইন্দ্রপুরের স্টুডিওতে তিনি তাঁকে আবার তাকে পরীক্ষা করেন।পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর সত্য সত্যজিত রায় বলেনঃ”আই অ্যাম সো হ্যাপি,আমি অনঙ্গ বউ আজকে পেয়ে গেছি।আমি ভাবতেও পারিনি এই মেয়েটি সেদিনের সেই মেয়েটি।আজকে এই মেয়ে সম্পূর্ন অন্য মেয়ে।এই আমার অনঙ্গ বউ।‘ববিতাও অনেক চাপের মুখে ছিলেন তাঁকে নেয়া হয় কিনা।ববিতা বলেনঃ “একজন অল্পবয়সী বাঙ্গালী যা করে-ভেতরে ভেতরে অনেক মানত-টানত করে শেষে জানলাম, আই ওয়াজ সিলেক্টেড ফর দেয়ার মুভি।”
সন্মাননা
ববিতা পরপর তিন বছর টানা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার জেতেন।সত্যজিৎ রায়ের অশনি সংকেত ছবিতে অনঙ্গ বউ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি বেঙ্গল ফ্লিম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সর্বভারতীয় শ্রেষ্ঠ নায়িকার পুরষ্কার পান। এছাড়াও সরকারী ও বেসরকারী অসংখ্য পুরষ্কার তিনি লাভ করেছেন। এজন্য তাঁকে ‘পুরষ্কার কন্যা’ বলা হত। ববিতা।তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে সবচেয়ে বেশিবার আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ গ্রহণ করেছিলেন।
From Amar Desh
ববিতা এক সময় ছিলেন নায়িকা। বিয়েও করেছিলেন, সুখী হতে পারেননি বলেই স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন। তার সেই স্বামী ইফতেখার বহু বছর হয় মারা গেছেন। একমাত্র পুত্রসন্তানকে নিয়ে তার এখনকার জীবন কেটে যাচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ছবিতে তিনি মায়ের ভূমিকায় এক সময় ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। সেই অবস্থাও এখন আর নেই। হাতে ছবির সংখ্যা খুবই কম। প্রযোজিকাও ছিলেন তিনি। ‘পোকামাকড়ের ঘরবসতি’ বানিয়ে তিনি এমন লোকসান দিলেন যে, যার জন্য পরবর্তী সময়ে ছবি নির্মাণে আর আগ্রহ দেখালেন না। তবে ববিতা নায়িকা হিসেবে সফল হয়েছিলেন। ১৯৬৮ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত শীর্ষ নায়িকাদের একজন ছিলেন তিনি। সত্যজিত্ রায়ের ‘অশনি সঙ্কেত’ ছবিতে অভিনয় করে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হন। একাধিকবার তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন, যে জন্য এই ববিতাও কিন্তু জীবদ্দশায় কিংবদন্তি হয়ে থাকলেন।
ববিতার ফিল্মি জীবনের বয়স প্রায় ৪২ বছর পেরিয়ে গেছে। ১৯৬৮ সাল থেকে তার অভিনয় শুরু ‘সংসার’ ছবি থেকে। ‘সংসার’-এ যে মেয়েটি বুকভরা আশা নিয়ে ফিল্মে এসেছিলেন, সেই ববিতা প্রথমে কি আশা করেছিলেন ফিল্মে সফল হবেন? অক্লান্ত চেষ্টা আর প্রতিভাময়ী হওয়াতে ববিতা ফিল্মে একটা যুগ সৃষ্টি করে গেছেন। ববিতার আসল নাম ফরিদা আখতার। ডাকনাম ‘পপি’। জন্ম ১৯৫৩ সালের ৩০ জুলাই বাগেরহাটে।
পৈতৃক বাড়ি যশোরে। ১৯৬৮ সালে প্রথম চিত্র জগতে আসেন সিনে ওয়ার্কশপের ব্যানারে নির্মিত ‘সংসার’ ছবিতে। তখন ওর নাম ছিল ‘সুবর্ণা’। বড় বোন সুচন্দার স্বামী জহির রায়হানই তাকে চিত্র জগতে নিয়ে আসেন। জহির রায়হানের ‘জ্বলতে সুরুজ কি নিচে’ ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে সুবর্ণা হলেন ‘ববিতা’। নায়িকা হিসেবে ববিতার যথার্থ উত্থান ঘটে ১৯৬৯ সালে ‘শেষ পর্যন্ত’ ছবির মাধ্যমে।
১৯৭০ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ববিতা শতাধিক ছবিতে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ছবি হলো—পিচঢালা পথ (১৯৭০), স্বরলিপি (১৯৭০), অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী (১৯৭২), ধীরে বহে মেঘনা (১৯৭৩), আবার তোরা মানুষ হ (১৯৭৩), অশনি সঙ্কেত (১৯৭৩), বাঁদী থেকে বেগম (১৯৭৫), লাঠিয়াল (১৯৭৫), নয়নমণি (১৯৭৬), অনন্ত প্রেম (১৯৭৬), গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৮), সুন্দরী (১৯৭৯), এতিম (১৯৮০), দূর দেশ (১৯৮১), লাইলী মজনু (১৯৮৩), তিনকন্যা (১৯৮৫), রামের সুমতি (১৯৮৫), চণ্ডিদাস ও রজকিনী (১৯৮৭), বিরহব্যথা (১৯৮৯), বিরাজ বৌ (১৯৮৯) প্রভৃতি।
জাফর ইকবাল, ফারুক, উজ্জ্বল, রাজ্জাক, সোহেল রানা, বুলবুল আহমেদ, ওয়াসিম, জাভেদ প্রমুখ ছিলেন তার রোমান্টিক নায়ক। তবে জাফর ইকবালের সঙ্গে অভিনয় করতে গিয়ে ওদের মধ্যে বেশ সুসম্পর্ক গড়ায়। শোনা যায়, এরা একে অপরের প্রেমেও নাকি পড়েছিলেন। পর্দায় প্রেমের দৃশ্যে অভিনয় করতে করতে যদিও তারা সফল হন, কিন্তু বাস্তবে তা হতে পারেননি। জাফর-ববিতা জুটির উল্লেখযোগ্য ছবি হলো— ‘এক মুঠো ভাত’। এই ছবিটি অসম্ভব ব্যবসাসফল হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ ছিল ভারতীয় হিন্দি ছবি ‘রুটি’র কাহিনী নিয়ে নির্মাণের জন্যই। ছবিতে ববিতা ও জাফর ইকবাল বিভিন্ন রোমান্টিক দৃশ্যে অংশ নেন। ‘অতো রূপের গরব করিস না, রূপ চিরদিন থাকবে না ... আমি অগ্নিশিখা তুই পতঙ্গ...’ গানের দৃশ্যে ওদের উপস্থিতি সেদিন (১৯৭৬ সালে) সর্বশ্রেণীর দর্শককে মুগ্ধ করেছিল।
‘শনিবারের চিঠি’ ছবিতে উজ্জ্বল-ববিতা জুটি সফল হয়েছিল। ফারুকের সঙ্গে ববিতার জুটি বাঁধার কাহিনীও মনে রাখার মতো। এই জুটির ‘নয়নমণি’ (১৯৭৬) ছবিটি ব্যবসাসফল হয়েছিল। পোশাকি ছবিতেও ববিতার উপস্থিতি ছিল। তার অভিনীত পোশাকি ছবির মধ্যে কয়েকটি হলো— নওজোয়ান, রাজবন্দি, চম্পা চামেলী, জংলী রানী, বাগদাদের চোর, শরীফ বদমাস, নিশান, তাজ ও তলোয়ার প্রভৃতি। ‘নিশান’-এ তার নায়ক ছিলেন জাভেদ।
ববিতার সঙ্গে কয়েকবারই দেখা হয়েছে। কয়েক বছর আগে তিনি জানিয়েছিলেন, বরাবর আমি সুস্থ সুন্দর জীবন চেয়েছি। আল্লাহ তায়ালা আমাকে যথেষ্ট দিয়েছেন। অন্যান্য অভিনেত্রীর থেকে আমার জীবনটা একটু ভিন্ন, একটু আলাদা। সমাজের রুচিশীল মানুষের মতোই আমার জীবন। ভবিষ্যতে একাকীই থাকব—এটাই আমার চিরদিনের ইচ্ছে।
ববিতা আরও জানিয়েছিলেন, ১৯৭০ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত গল্পের জন্য ছবিঘরে দর্শকের ভিড় হতো। আমি ভাগ্যবতী, কেননা যখন ফিল্মে নায়িকা ছিলাম তখন সর্বশ্রেণীর দর্শক ছবিঘরে আসত। আমার যুগে অভিনয় দেখানোর যথেষ্ট স্কোপ ছিল। সে জন্য আমার অভিনীত ছবির প্রশংসা এখনও শুনতে পাই। তখন গর্বে আনন্দে বুকটা যে ভরে যায়।
চলচ্চিত্রসমূহ
* সংসার (১৯৬৮)
* শেষ পর্যন্ত (১৯৬৯)
* অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী
* আলোর মিছিল
* বাঁদী থেকে বেগম
* ডুমুরের ফুল
* বসুন্ধরা
* গোলাপী এখন ট্রেনে
* নয়ন মণি
* সুন্দরী
* অনন্ত প্রেম
* লাঠিয়াল
* এক মুঠো ভাত
* আকাঙ্খা
* মা
* ফকির মজনু শাহ
* সূর্য গ্রহণ
* এখনই সময়
* কসাই
* জন্ম থেকে জলছি
* বড় বাড়ির মেয়ে
* পেনশন
* দহন
* চন্ডীদাস ও রজকিনী
* দিপু নাম্বার টু
* অশনি সংকেত (১৯৭৩)
* রামের সুমতি (১৯৮৫)
* নিশান
* মন্টু আমার নাম
* নাগ-নাগিনী
* দোস্তী
* প্রতিজ্ঞা
* বাগদাদের চোর
* লাভ ইন সিঙ্গাপুর
* প্রতিহিংসা
* নাগ পূর্ণিমা
* চ্যালেঞ্জ
* হাইজ্যাক
* মায়ের জন্য পাগল
* টাকা আনা পাই
* স্বরলিপি
No comments:
Post a Comment