প্রাথমিক জীবন
কানন দেবীর ছিলেন একজন রক্ষিতার সন্তান।তাঁর বাবা ছিলেন সওদাগর অফিসের একজন ছোট কেরানি। তার একটি ছোট দোকানও ছিল।কিন্তু কাননের বয়স যখন ৯ বছর তখন তিনি মারা যান। কাননের মা তখন তার ২ কন্যাকে নিয়ে এক দুরসম্পর্কের আত্নীয়ের বাড়িতে রাঁধুনী ও ঝিয়ের কাজ নেন। অপমান ও লাঞ্ছনা তারা বেশি দিন সহ্য করতে পারেন নি। তাই তারা অসম্ভব দারিদ্রের মাঝে একটি ছোট বাসা ভাড়া নেন।দারিদ্রের কারনে তিনি মাত্র বার-তের বছর বয়সে ম্যাডানের স্টুডিওতে হাজির হন অভিনয় করতে।তিনি সেই বয়সে নির্বাক ছায়াছবি জয়দেবে অভিনয় করেন নায়িকা হিসেবে।[১]
অভিনয় জীবন
কানন দেবীর সত্যিকারের অভিনয় জীবন শুরু হয় ১৯৩০ সালে। এ সময় তাঁর প্রথম ছবি ১৯৩১ সালের জোর বরাত।সেটা ছিল সবাক চলচ্চিত্র। ১৯৩৫ সালে মুক্তি পাওয়া মানময়ী গার্লস স্কুল তাকে প্রতিষ্ঠা দেয় চলচ্চিত্র জগতে১৯৩৭ সালে মুক্তি পাওয়া মুক্তি নামের চলচ্চিত্র তাঁকে প্রথম জীবনে খ্যাতি এনে দেয়।৪০-এর দশকের পরিচয় এবং শেষ উত্তর ছবির জন্য তিনি পরপর দু’বার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পুরষ্কার পান।
শ্রীমতি পিকচারস
১৯৩৭ সাল থেকে ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত কানন দেবীর জন্য সবচেয়ে বেশি খ্যাতির সময় ছিল।তিনি এ সময় সম্ভ্রান্ত কানন দেবীতে পরিণত হন কানন বালা থেকে।তিনি তখন রোমান্টিক নায়িকার বদলে স্ত্রী ও মায়ের ভূমিকাতেই বেশী অভিনয় করেন।১৯৪৮ সালে তিনি শ্রীমতি পিকচার্স গড়ে তোলেন যার বেশির ভাগ ছবিই ছিল শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কাহিনী অবলম্বনে।এই কোম্পানীর ছবিতে তিনি কেবল অভিনয় ও প্রযোজনাই করেন নি, তিনি পরিচালনাও করেন।তার ছবির পরিচালকের একটি তিন সদস্য বিশিষ্ট দল ছিল যার নাম সব্যসাচী। তিনি তিন জনের একজন ছিলেন।
গায়িকা
কানন দেবী একজন ভাল গায়িকাও ছিলেন। তিনি ওস্তাদ আল্লারাখার কাছে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের শিক্ষা নেন।এছাড়াও তিনি ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়, রাইচাঁদ বড়াল, কাজী নজরুল ইসলাম,অনাদি দস্তিদার ও পঙ্কজ কুমার মল্লিকদের কাছেও তালিম নেন।তিনি আধুনিক গান ছাড়াও রবীন্দ্র সঙ্গীতও গেয়েছিলেন, যা রবীন্দ্রনাথকেও খুশি করে তুলেছিল। এ গানকে তিনি ভদ্রঘর থেকে বাংলার সাধারণ ঘরেও জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন।
প্রভাব
কানন দেবী ভীষণ জনপ্রিয় ছিলেন।চলচ্চিত্রে ইতিহাসবিদ রবি বসু লিখেছেন যে কানন বালাকে দেখে অনেক যুবক ও প্রৌঢ়ের হৃদস্পন্দন বেড়ে যেত। রূপবাণী সিনেমা হলে এক উদ্ভ্রান্ত যুবক মোহগ্রস্ত হয়ে তার সিনেমার রোমান্টিক দৃশ্যের সময় পর্দার দিকে ছুটে গিয়েছিল তাকে ধরতে।কলকাতার রাস্তায় চট বিছিয়ে তার আলোকচিত্র বিক্রি হত।মহিলারা তাঁর ফ্যাশনে শাড়ি-ব্লাউজ পরা শুরু করেন। এমনকি কানের দুলও তৈরি করান তারা।
অসহায়ত্ব
কানন দেবী ছিলেন সমাজের নিচের তলা থেকে আসা শেষ বড় অভিনেত্রী । অভাবের কারণে কিশোর বয়স থেকেই তাকে পর্দায় নগ্নতার অভিনয় করতে হয়েছে । নায়ক ও পরিচালকের লোলুপতার শিকার হতে হয়েছে । কেউ হাত ধরে টানাটানি করেছে, কেউ কেউ পিঠে হাত বুলিয়ে আদর করেছে । কারো কারো কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তারা প্রতিশোধও নেয় তার ওপর । ১৯৩১ সালের ছবি জোর বরাতের একটি দৃশ্যে নায়ক তাকে জড়িয়ে ধরে ঠোটে চুমু খান যা তাকে অপমানিত ও ব্যাথিত করে । পরিচালকের নির্দেশেই নায়ক এই কাজ করেন তাকে আগে না জানিয়েই । অভিভাবকহীন নিচু ঘরের মেয়ে হওয়ায় তাকে টাকা পয়সার লোভ দেখিয়ে নগ্ন দৃশ্যে বাধ্য করা হয় । এ রকম একটি ছবি হলো বাসব দত্তা । এ ছবিতে তার অনিচ্ছায় নগ্নতার প্রদর্শন ছিল । সম্ভবত সে কারণে এই ছবি সফল হয়নি । এছাড়া তাকে পরিচালকেরা তার অসহায় অবস্থার সুযোগ নিয়ে টাকা পয়সার ব্যাপারে ঠকাতো ।
No comments:
Post a Comment