Home | Menu | Poem | Jokes | Games | Science | Omss বাংলা | Celibrity Video | Dictionary

Poets Biography

বাংলাদেশের খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮

হুমায়ূন আহমেদ (জন্ম নভেম্বর ১৩, ১৯৪৮) বিংশ শতাব্দীর বাঙ্গালী জনপ্রিয় ঔপন্যাসিকদের মধ্যে অন্যতম। তিনি একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার এবং নাট্যকার। বলা চলে যে বাংলা সায়েন্স ফিকশনের তিনি পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও তিনি সমাদৃত। ২০০৯ পর্যন্ত তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা দুই শতাধিক। তাঁর আরেক পরিচয়ঃ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর রসায়ন বিভাগের একজন প্রাক্তন অধ্যাপক। অতুলনীয় জনপ্রিয়তা সত্বেও তিনি অন্তরাল জীবন-যাপন করেন এবং লেখলেখি ও চিত্রনির্মাণের কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন। তাঁর বেশ কিছু গ্রন্থ পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে, বেশ কিছু গ্রন্থ স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত।

পরিবার

হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ই নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা আখতার খাতুন। তাঁর পিতা একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন এবং তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। তার অনুজ মুহম্মদ জাফর ইকবাল দেশের একজন বিজ্ঞান শিক্ষক এবং কথাসাহিত্যিক; সর্বকনিষ্ঠ ভ্রাতা আহসান হাবীব রম্য সাহিত্যিক এবং কার্টুনিষ্ট।

ছোটকালে হুমায়ূন আহমেদের নাম ছিল শামসুর রহমান; তাঁর পিতা নিজ নাম ফয়জুর রহমানের সাথে মিল রেখে ছেলের নাম রাখেন শামসুর রহমান। পরবর্তীতে তিনি নিজেই নাম পরিবর্তন করে ‌‌‌হুমায়ূন আহমেদ রাখেন। হুমায়ূন আহমেদের ভাষায়, তাঁর পিতা ছেলেমেয়েদের নাম পরিবর্তন করতে পছন্দ করতেন। তাঁর ছোটভাই মুহম্মদ জাফর ইকবালের নাম আগে ছিল বাবুল এবং ছোটবোন সুফিয়ার নাম ছিল শেফালি। হুমায়ূন আহমেদের মতে, তার বাবা যদি আরও কিছুদিন বেঁচে থাকতেন, তবে তাদের নাম আরো কয়েক দফা পরিবর্তন করতেন।

হুমায়ূন আহমেদের প্রথম স্ত্রীর নাম গুলতেকিন আহমেদ। তাদের বিয়ে হয় ১৯৭৩ সালে। এই ঘরে তাদের তিন মেয়ে এবং দুই ছেলে জন্মগ্রহণ করে। তিন মেয়ের নাম বিপাশা আহমেদ, নোভা আহমেদ, শীলা আহমেদ এবং ছেলের নাম নূহাশ আহমেদ। অন্য আরেকটি ছেলে অকালে মারা যায়। ১৯৯০ খৃস্টাব্দের মধ্যভাগ থেকে শীলা আহমেদের বান্ধবী এবং তার বেশ কিছু নাটক-চলচ্চিত্রে অভিনয় করা অভিনেত্রী শাওনের সাথে হুমায়ূন আহমেদের ঘনিষ্ঠতা জন্মে। এর ফলে সৃষ্ট পারিবারিক অশান্তির অবসানকল্পে ২০০৫-এ গুলতেকিনের সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ হয় এবং ঐ বছরই শাওনকে বিয়ে করেন। এ ঘরে তাদের তিন ছেলেমেয়ের জন্মগ্রহণ করে। প্রথম ভূমিষ্ঠ কন্যটি মারা যায়। ছেলেদের নাম নিষাদ হুমায়ূন ও নিনিত হুমায়ুন।

শিক্ষা এবং কর্মজীবন

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন শাস্ত্রে অধ্যয়ন করেন এবং বিএসসি ও এমএসসি ডিগ্রী লাভ করেন। পরে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পলিমার রসায়ন বিষয়ে গবেষণা করে পিএইচডি লাভ করেন। তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে। পরবর্তীতে তিনি অধ্যাপনা ছেড়ে লেখালিখি, নাটক নির্মাণ এবং চলচ্চিত্র নির্মাণে সম্পূর্ণভাবে আত্মনিয়োগ করেন।

সাহিত্যকৃতি

ছাত্র জীবনে একটি নাতিদীর্ঘ উপন্যাস রচনার মধ্য দিয়ে হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্যজীবনের শুরু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসীন হল-এর অধিবাসী ছাত্র হুমায়ূন আহমেদের এই উপন্যাসটির নাম নন্দিত নরকে। ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে উপন্যাসটি প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। ১৯৭২-এ কবি-সাহিত্যিক আহমদ ছফার উদ্যোগে উপন্যাসটি খান ব্রাদার্স কর্তৃক গ্রন্থাকারে প্রথম প্রকাশিত হয়। প্রখ্যাত বাঙলা ভাষাশাস্ত্র পণ্ডিত আহমদ শরীফ স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে এ গ্রন্থটির ভূমিকা লিখে দিলে সবার মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি হয়। শঙ্খনীল কারাগার তাঁর ২য় গ্রন্থ। এ পর্যন্ত (২০০৯) তিনি দুই শতাধিক গল্পগ্রন্থ ও উপন্যাস প্রকাশনা করেছেন। তাঁর রচনার প্রধান কয়েকটি বৈশিষ্টের মধ্যে অন্যতম হলো 'গল্প-সমৃদ্ধি'। এছাড়া তিনি অনায়াসে ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে অতিবাস্তব ঘটনাবলীর অবতারণা করেন যাকে একরূপ যাদু বাস্তবতা হিসেবে গণ্য করা যায়। তাঁর গল্প ও উপন্যাস সংলাপপ্রধান। তাঁর বর্ণনা পরিমিত এবং সামান্য পরিসরে কয়েকটি মাত্র বাক্যের মাধ্যমে চরিত্র চিত্রণের অদৃষ্টপূর্ব প্রতিভা তাঁর রয়েছে। যদিও সমাজসচেতনতার অভাব নেই তবু লক্ষ্যণীয় যে তাঁর রচনায় রাজনৈতিক প্রণোদনা অনুপস্থিত। সকল রচনাতেই একটি প্রগাঢ় শুভবোধ ক্রীয়াশীল থাকে; ফলে 'ভিলেইন' চরিত্রও তাঁর লেখনীতে লাভ করে দরদী রূপায়ণ। অনেক রচনার মধ্যে তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং উপলব্ধির প্রচ্ছাপ লক্ষ্য করা যায়। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে রচিত উপন্যাস মধ্যাহ্ন তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা হিসেবে পরিগণিত। এছাড়া জ্যোৎস্না ও জননীর গল্প আরেকটি বড় মাপের রচনা যা কি-না ১৯৭১-এ বাংলাদেশের মুক্তযুদ্ধ অবলম্বন করে রচিত। তবে সাধারণত তিনি সমসাময়িক ঘটনাবলী নিয়ে লিখে থাকেন। তাঁর গল্প সংগ্রহ ১৯৭১ বাংলা ছোটগল্প জগতে একটি নতুন দিগন্ত বলে গণ্য হয়। গল্প তৈরীতে তাঁর প্রতিভা তুলনা রহিত।

স্বগৃহে বৈঠকী আড্ডায় হুমায়ূন আহমেদ (ফটো: ফয়জুল লতিফ চৌধুরী, ২৪ জুলাই ২০১১)

নাটক

টিভি নাটক

১৯৮০-এর দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্য নাটক রচনা শুরু করেন তিনি। এটি তাকে রাতারাতি জনপ্রিয় করে তোলে।
তার অন্যতম ধারাবাহিক নাটক -

  • এইসব দিন রাত্রি
  • বহুব্রীহি
  • কোথাও কেউ নেই
  • নক্ষত্রের রাত
  • অয়োময়
  • আজ রবিবার

এদের বেশিরভাগই ৮০ থেকে ৯০ এর দশকে নির্মিত। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি অনেক প্যাকেজ নাটক নির্মাণ করেছেন।

চলচ্চিত্র নির্মাণ

টেলিভিশনের জন্য একের পর এক দর্শক-নন্দিত নাটক রচনার পর হুমায়ূন আহমেদ ১৯৯০-এর গোড়ার দিকে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন। শ্যামল ছায়া চলচ্চিত্রটি তিনি নির্মাণ করেছেন ১৯৭১এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে। এটি অস্কার প্রদর্শনীর জন্য মনোনীত হয়। আগুনের পরশমণি তাঁর আরেকটি দর্শক নন্দিত চলচ্চিত্র।

হুমায়ূন আহমেদের গান

হুমায়ূন আহমদের গান বলতে বাঙলা ভাষার অন্যতম প্রধান কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ রচিত গান বোঝানো হয়ে থাকে। হুমায়ূন আহমেদ মূলতঃ গান রচয়িতা বা গীতিকার নন। কেবল নাটক ও চলচ্চিত্রের প্রয়োজনে তিনি গান রচনা করে থাকেন। তার অনেকগুলো গান বেশ জনপ্রিয়। এসবের এলবাম প্রকাশিত হয়েছে।

ব্যক্তিজীবন

ঢাকা শহরের অভিজাত আবাসিক এলাকা ধানমন্ডীতে নির্মিত তাঁর বাড়ীর নাম দখিন হাওয়া। আর ঢাকার অদূরে গাজীপুরের গ্রামাঞ্চলে স্থাপিত বাগান বাড়ী নূহাশ পল্লীতে কাটে তার বেশীর ভাগ সময়। তিনি বিবরবাসী মানুষ তবে মজলিশী। রসিকতা তার প্রিয়। তিনি ভণিতাবিহীন। নিরবে মানুষের স্বভাব-প্রকৃতি ও আচার-আচরণ পর্যবক্ষেণ করা তার শখ। তবে সাহিত্য পরিমণ্ডলের সংকীর্ণ রাজনীতি বা দলাদলিতে তিনি কখনো নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন নি। তিনি স্বল্পবাক, কিছুটা লাজুক প্রকৃতির মানুষ এবং বিপুল জনপ্রিয়তা সত্বেও অন্তরাল জীবন-যাপনে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তিনি ছবি এঁকেও অবসর সময় কাটাতে ভালবাসেন। তিনি অত্যন্ত অভিমানী প্রকৃতির মানুষ। স্ত্রী গুলতেকিনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদের পর আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের কাছ থেকে যে বৈরীতামূলক ব্যবহার পেয়েছেন তা তাঁক ব্যথিত করেছে। হৃদরোগের কারণে তিনি প্রায়শঃ মৃত্যুচিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়েন। বাংলাদেশে তাঁর প্রভাব তীব্র ও গভীর; এজন্যে জাতীয় বিষয়ে ও সংকটে প্রায়ই তাঁর বক্তব্য সংবাদ মাধ্যমসমূহ গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করে থাকে।

পুরস্কার

  • বাংলা একাডেমী পুরস্কার ১৯৮১
  • শিশু একাডেমী পুরস্কার
  • একুশে পদক ১৯৯৪
  • জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (শ্রেষ্ঠ কাহিনী ১৯৯৩, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ১৯৯৪, শ্রেষ্ঠ সংলাপ ১৯৯৪)
  • লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩)
  • মাইকেল মধুসুদন পদক (১৯৮৭)
  • বাকশাস পুরস্কার (১৯৮৮)
  • হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০)
  • জয়নুল আবেদীন স্বর্ণপদক

গ্রন্থতালিকা

নির্বাচিত উপন্যাস

  • নন্দিত নরকে
  • শঙ্খনীল কারাগার
  • এইসব দিনরাত্রি
  • জোছনা ও জননীর গল্প
  • মন্দ্রসপ্তক
  • দূরে কোথাও
  • সৌরভ
  • নি
  • ফেরা
  • কৃষ্ণপক্ষ
  • সাজঘর
  • বাসর
  • গৌরীপুর জাংশান
  • নৃপতি (নাটক)
  • বহুব্রীহি
  • আশাবরি
  • দারুচিনি দ্বীপ
  • শুভ্র
  • নক্ষত্রের রাত
  • নিশীথিনী
  • আমার আছে জল
  • কোথাও কেউ নেই
  • আগুনের পরশমণি
  • শ্রাবণ মেঘের দিন
  • আকাশ ভরা মেঘ
  • মহাপুরুষ
  • শূন্য
  • ওমেগা পয়েন্ট
  • ইমা
  • আমি এবং আমরা
  • কে কথা কয়
  • অমানুষ (অনুবাদ)
  • অপেক্ষা
  • মেঘ বলেছে যাবো যাবো
  • পেন্সিলে আঁকা পরী
  • অয়োময়
  • কুটু মিয়া
  • দ্বিতীয় মানব
  • ইস্টিশন
  • মধ্যাহ্ন (২ খণ্ড একত্রে)
  • মাতাল হাওয়া, (২০১০)
  • শুভ্র গেছে বনে, (২০১০)
  • ম্যজিক মুনসি।।

হিমু সংক্রান্ত উপন্যাস

  • ময়ুরাক্ষী
  • দরজার ওপাশে
  • হিমু
  • হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম
  • এবং হিমু
  • পারাপার
  • হিমুর রুপালী রাত্রি
  • একজন হিমু কয়েকটি ঝিঝি পোকা
  • হিমুর দ্বিতীয় প্রহর
  • তোমাদের এই নগরে
  • সে আসে ধীরে
  • আঙ্গুল কাটা জগলু
  • হিমু মামা
  • হলুদ হিমু কালো র‌্যাব
  • আজ হিমুর বিয়ে
  • হিমু রিমান্ডে(২০০৮)
  • হিমুর মধ্যদুপুর
  • চলে যায় বসন্তের দিন
  • হিমুর একান্ত সাক্ষাৎকার ও অন্যান্য

মিসির আলি সংক্রান্ত উপন্যাস

  • দেবী
  • নিশিথীনী
  • বৃহন্নলা
  • আমিই মিসির আলি
  • কহেন কবি কালিদাস
  • ভয়
  • মিসির আলির অমিমাংসিত রহস্য
  • বাঘ বন্দী মিসির আলি
  • মিসির আলির চশমা (২০০৮)

আত্মজীবনী

  • বলপয়েন্ট
  • কাঠপেন্সিল (২০১০)
  • ফাউন্টেইন পেন

No comments: