জীবন ও কেরিয়ার
ঋতুপর্ণার জন্ম কলকাতায়। খুব অল্পবয়সেই চিত্রাংশু নামে একটি শিল্পবিদ্যালয় থেকে অঙ্কন, নৃত্য ও হাতের কাজে দক্ষতা অর্জন করেন। মাউন্ট কারমেল স্কুলে তাঁর পড়াশোনা। পরে লেডি ব্রাবোর্ন কলেজ থেকে ইতিহাসে স্নাতক হয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাবিভাগে স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে ভর্তি হন। তবে অভিনয় পেশায় মনোযোগ দেবার জন্য পড়াশোনায় ইতি টানতে হয়। আনন্দলোক ও বাংলাদেশের হৃদয় পত্রিকায় তিনি নিয়মিত কলামও লিখেছেন।
ঋতুপর্ণার প্রথম ছবি শ্বেতপাথরের থালা মুক্তি পায় ১৯৯৫ সালে। ছবিতে তিনি অভিনয় করেন সহ-অভিনেত্রীর চরিত্রে। তিনি তখন আধুনিক ইতিহাসে স্পেশালাইজেশনসহ এমএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী। এরপর তাঁকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রভাত রায়ের এই ছবিটি সেইবছর শ্রেষ্ঠ বাংলা ছবি হিসাবে জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন। সুজন সখী, নাগপঞ্চমী, মনের মানুষ ও সংসার সংগ্রাম প্রভৃতি তাঁর প্রথম দিকের ছবিগুলি বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। মুম্বাইতে তিনি হেমা মালিনীর সঙ্গে মোহিনী নামে একটি টেলিফিল্মও করেন। এছাড়াও তিসরা কৌন নামে অপর এক হিন্দি ছবিতেও তিনি নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেন।
ঋতুপর্ণ ঘোষের দহন (১৯৯৭), উৎসব (২০০০), অপর্ণা সেনের পারমিতার একদিন (২০০০) ও বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের মন্দ মেয়ের উপাখ্যান (২০০২) ছবিতে তাঁর অভিনয় বিদগ্ধ মহলের প্রশংসা অর্জন করে। দহন ছবিতে ধর্ষণের শিকার এক নববিবাহিতা রোমিতা চরিত্রে অভিনয় করে তিনি ১৯৯৮ সালে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসাবে অর্জন করেন জাতীয় পুরস্কার।
বাংলাদেশের ছবিতে অভিনয় করে সেদেশেও সমান জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি লাভ করেছেন ঋতুপর্ণা। তিনি ওড়িশি ও মণিপুরী নৃত্যে পারঙ্গমা। তাঁর নিজের ভাবনা আজ ও কাল নামে একটি নাচের দলও আছে। এই দল রবীন্দ্রনাথের চিত্রাঙ্গদা, চণ্ডালিকা, শ্যামা, মায়ার খেলা প্রভৃতি নৃত্যনাট্য ও অন্যান্য আধুনিক ভাবনার নৃত্যানুষ্ঠান মঞ্চস্থ করে খ্যাতিলাভ করেছে। এছাড়া তিনি স্থাপন করেছেন প্রিজম এন্টারটেইনমেন্ট নামে একটি প্রযোজনা সংস্থাও।
ঋতুপর্ণা আউটডোর খেলাধূলার সঙ্গেও যুক্ত। অবসর সময়ে তিনি ব্যাডমিন্টন খেলেন।
১৯৯৯ সালে বাল্যপ্রেমিক সঞ্জয় চক্রবর্তীকে বিবাহ করেন। সঞ্জয় মবিঅ্যাপস নামে কলকাতার একটি সিইও-এর প্রতিষ্ঠাতা। থ্যালাসেমিয়া রোগাক্রান্ত শিশুদের সাহায্যার্থেও ঋতুপর্ণা নিরলস সহযোগিতা করে থাকেন।
পুরস্কার ও সম্মাননা
- ভারত নির্মাণ পুরস্কার (১৯৯৫)
- কলাকার পুরস্কার (১৯৯৬)
- কাজী নজরুল ইসলাম জন্মশতবার্ষিকী পুরস্কার (১৯৯৬) – ল সোসাইটি অব ক্যালকাটা প্রদত্ত
- শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে রৌপ্য কমল (১৯৯৮, সালে দহন ছবিতে সহ-অভিনেত্রী ইন্দ্রাণী হালদারের সঙ্গে) – ৪২তম ভারতীয় জাতীয় চলচ্চত্র উৎসব
- উজালা আনন্দলোক শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী (২০০০) – দহন ছবির জন্য
- উজালা আনন্দলোক শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী (২০০০) – আত্মীয়স্বজন ছবির জন্য
- বিএফজেএ শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী (২০০০) পুরস্কার
- বিএফজেএ শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী (২০০৬) পুরস্কার – দ্বিতীয় বসন্ত ছবির জন্য
ফিল্মোগ্রাফি
- চতুরঙ্গ (২০০৮)
- আয়নাতে (২০০৮)
- ম্যায় ওসামা (২০০৮)
- মোন অ্যামোর : শেষের কবিতা রিভিজিটেড (২০০৮)
- সির্ফ লাইফ লুকস গ্রিনার অন দ্য আদার সাইড (২০০৮)
- চাঁদের বাড়ি (২০০৭)
- গৌরী (২০০৭)
- আলো (২০০৩)
- অন্ধকারের শব্দ (২০০৬)
- অনুরণন (২০০৬)
- ব্যতিক্রমী (২০০৩)
- চক্রব্যুহ
- দহন (১৯৯৭)
- তপস্যা (২০০৬)
- ম্যায়, মেরি পত্নী আউর ওহ্ (২০০৫)
- ইউএনএনএস(২০০৫)
- নিশিযাপন (২০০৫)
- কালো চিতা (২০০৪)
- মন্দ মেয়ের উপাখ্যান (২০০২)
- সবসে বড়কর কৌন(২০০২)
- কালি টোপি লাল রুমাল (২০০০)
- উৎসব (২০০০)
- পারমিতার একদিন (২০০০)
- মোহিনী (১৯৯৫)
- তিসরা কৌন
- শেষ চিঠি
- শ্বেতপাথরের থালা (১৯৯৫)
- দ্বিতীয় বসন্ত
- সিঁদুরের অধিকার
- দেশ দরদী
- তোমার আমার প্রেম
- মিস মৈত্রেয়ী
- রাঙা বউ
- স্বামী কেন আসামী
- গানে ভুবন ভরিয়ে দেবো
- বিষ্ণু নারায়ণ
- মধুমালতী
- আমি সেই মেয়ে
- সিঁদুর খেলা